শাপিত অভিশাপ


শাপিত অভিশাপ

রাতের অন্ধকারে গ্রামটা কেমন যেন ভৌতিক দেখাচ্ছিল। আকাশে পূর্ণিমার আলো থাকলেও গাছগুলোর ছায়া এমনভাবে পড়ছিল, যেন কেউ লুকিয়ে আছে। বৃদ্ধ কৃষ্ণচরণ তার পুরোনো কাঠের বারান্দায় বসে পান খাচ্ছিলেন। গ্রামবাসীরা তাকে ভয় পায়, কারণ লোকমুখে প্রচলিত, তার ওপর নাকি এক অভিশাপ আছে।



অনেক বছর আগে, এই গ্রামে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। কৃষ্ণচরণের কন্যা, মায়া, ছিল অসম্ভব সুন্দরী। তার রূপে মোহিত হয়ে গিয়েছিল গ্রামের জমিদার পুত্র রুদ্র। কিন্তু মায়া তাকে ভালোবাসত না। একদিন, গভীর রাতে রুদ্র মায়াকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে কৃষ্ণচরণ যখন এই সংবাদ পান, তখন তিনি অভিশাপ দেন – এই গ্রামে আর কোনো ভালোবাসা টিকবে না।


এরপর থেকে গ্রামের কেউই সুখে সংসার করতে পারেনি। নতুন বিয়ে হলেই অজানা রোগে মৃত্যু হয়, প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে অদ্ভুত দুর্ঘটনা ঘটে।

একদিন, শহর থেকে এক তরুণ গবেষক, অরিত্র, এই গ্রামের রহস্য উদঘাটনের জন্য আসে। সে এইসব গল্প বিশ্বাস করত না। সে কৃষ্ণচরণের কাছে যায়, কিন্তু বৃদ্ধ তাকে সাবধান করে দেয়। কিন্তু অরিত্র নাছোড়বান্দা। সে গ্রামের পুরনো দলিল ঘাঁটতে শুরু করে।


এক রাতে, সে একটি পুরনো কুঠিরের মধ্যে একটি চিঠি খুঁজে পায়। চিঠিটি ছিল মায়ার লেখা – যেখানে সে বলেছিল, রুদ্র তাকে জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছিল, কিন্তু সে তা মেনে নেয়নি। সে নিজেই এক রাতে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল।

এই সত্য প্রকাশ করার পর, গ্রামের অভিশাপ আস্তে আস্তে ভাঙতে শুরু করে। কিন্তু কৃষ্ণচরণ তখনও বিশ্বাস করেন, তার দেওয়া অভিশাপ চিরকাল থাকবে। সেই রাতেই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে।


অরিত্র হঠাৎ হারিয়ে যায়। গ্রামের লোকজন তাকে কোথাও খুঁজে পায় না। কয়েকদিন পর, তার মৃতদেহ পাওয়া যায় সেই নদীর ধারে – যেখানে মায়া মারা গিয়েছিল।

এরপর থেকে কেউ আর সেই সত্য জানার চেষ্টা করেনি। অভিশাপ হয়তো ভেঙে গিয়েছিল, কিন্তু অন্ধকার কখনো পুরোপুরি মুছে যায় না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ