৩ মাসের জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?

আপনার পরিস্থিতিটি বুঝতে পেরেছি। আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণের ৩ মাসের ইনজেকশন নেওয়ার পর মাসিক অনিয়মিত হয়ে গেছে এবং এখন তা বন্ধ রয়েছে। এটি অনেক মহিলার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে, কারণ এই ধরনের ইনজেকশনে থাকা হরমোন শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এখন আপনার কী করা উচিত, সেটি ব্যাখ্যা করার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করব।




৩ মাসের জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?

ডিপো-প্রোভেরা (Depo-Provera) বা নরিসটেরাট (Noristerat) নামক ইনজেকশন একটি প্রোগেস্টিন-ভিত্তিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এটি ডিম্বাণুর মুক্তি (ওভুলেশন) বন্ধ করে এবং জরায়ুর শ্লৈষ্মিক স্তরকে (Endometrium) পাতলা করে, ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। ইনজেকশনের কারণে শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়, যা মাসিক বন্ধ বা অনিয়মিত হওয়ার কারণ হতে পারে।





আপনার মাসিক বন্ধ থাকার সম্ভাব্য কারণগুলো

আপনি তিন মাসের ইনজেকশন নেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে কয়েক মাসের জন্য মাসিক বন্ধ হতে পারে। কারণগুলো হতে পারে—

১. ইনজেকশনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

অনেক মহিলার ক্ষেত্রে ৩ মাসের ইনজেকশন নেওয়ার পর ৬ মাস বা তারও বেশি সময় মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। ইনজেকশন বন্ধ করার পর হরমোনের স্বাভাবিক স্তরে ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগে।




২. গর্ভধারণের সম্ভাবনা

যদিও জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন খুব কার্যকরী, তবে কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিই ১০০% কার্যকর নয়। যদি ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হয়ে গিয়ে থাকে এবং আপনি অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক করে থাকেন, তবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

৩. শরীরের হরমোন ভারসাম্যের পরিবর্তন

অনেক সময় হরমোনের তারতম্যের কারণে মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এটি স্বাভাবিক ব্যাপার, তবে দীর্ঘ সময় মাসিক না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।





আপনার করণীয় কী?

১. গর্ভধারণ পরীক্ষা করুন

প্রথমেই আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি গর্ভবতী নন। আপনি বাড়িতে একটি প্রেগনেন্সি টেস্ট (Pregnancy Test) করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমবার প্রস্রাবের মাধ্যমে পরীক্ষা করলে ফলাফল আরও নির্ভুল হবে।

যদি পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে এবং আপনার মাসিক না হয়, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। এটি ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে, যদি ফলাফল পজিটিভ আসে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

২. কিছুদিন অপেক্ষা করুন

যেহেতু ৩ মাসের ইনজেকশনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, তাই মাসিক স্বাভাবিক হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। সাধারণত ৬ মাসের মধ্যে মাসিক স্বাভাবিক হয়ে যায়। যদি ৬ মাস পরেও মাসিক না হয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।




৩. পুষ্টিকর খাবার ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অনুসরণ করুন

হরমোন ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। আপনার খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন—

  • শাকসবজি ও ফলমূল
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি
  • প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (ডিম, মাছ, মাংস)
  • আয়রন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার

এছাড়া হালকা ব্যায়াম ও মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টাও মাসিক স্বাভাবিক করতে সাহায্য করতে পারে।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

যদি ৬ মাসের বেশি সময় ধরে মাসিক বন্ধ থাকে, তবে অবশ্যই গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে যান। তারা আপনাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক পরামর্শ দেবেন।





কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?

আপনার নিম্নলিখিত উপসর্গগুলোর কোনোটি থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন—

  • ৬ মাসের বেশি সময় ধরে মাসিক না হওয়া
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
  • প্রচণ্ড মাথাব্যথা বা শরীর দুর্বল লাগা
  • তলপেটে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা
  • গর্ভধারণের লক্ষণ দেখা দেওয়া (বমি বমি ভাব, স্তনে ব্যথা ইত্যাদি)



শেষ কথা

আপনার পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। এটি সাধারণত ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যা সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যায়। তবে, গর্ভধারণ পরীক্ষা করা জরুরি এবং যদি দীর্ঘ সময় মাসিক না হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। আপনার সুস্থতা ও নিরাপত্তা সবার আগে।

আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় জিজ্ঞাসা করতে পারেন। 😊

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ