হোমিওপ্যাথিতে উপকার পেয়েছেন?
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি যা বিশ্বের বহু দেশে প্রচলিত। এর উদ্ভব জার্মানির চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের হাত ধরে ১৭৯৬ সালে। হোমিওপ্যাথির মূল নীতিগুলোর মধ্যে "Like cures like" বা "যে বস্তু রোগ সৃষ্টি করতে পারে, তা-ই নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করলে রোগ সারাতে পারে" অন্যতম। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে অত্যন্ত নিম্নমাত্রার প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপ্ত করতে সহায়তা করে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপকারিতা
হোমিওপ্যাথি নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও, অনেকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এটি উপকারী বলে মনে করেন। বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হতে দেখা যায়, যেমন—
-
অ্যালার্জি ও চর্মরোগআমি নিজেও একসময় দীর্ঘদিন ত্বকের অ্যালার্জিতে ভুগছিলাম। প্রচলিত চিকিৎসায় তেমন ফল না পাওয়ায় এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেই। তিনি আমার জন্য বিশেষভাবে তৈরি কিছু ওষুধ নির্দিষ্ট সময় ধরে গ্রহণ করতে বলেন। কয়েক মাসের মধ্যেই চর্মরোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, যা অন্য ওষুধে সম্ভব হয়নি।
-
হজমের সমস্যা ও গ্যাস্ট্রিকদীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিক ও হজমের সমস্যায় ভুগছিলাম। চিকিৎসকের পরামর্শে ন্যাট্রাম ফস ও কার্বো ভেজ নামক দুটি হোমিও ওষুধ গ্রহণের পর আমার সমস্যার উন্নতি ঘটে। অন্যান্য ওষুধ যেখানে সাময়িক স্বস্তি দিত, সেখানে হোমিওপ্যাথি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান এনে দেয়।
-
স্নায়বিক ও মানসিক চাপমানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমানোর ক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথি অনেকের জন্য কার্যকর বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে আর্সেনিকাম অ্যালবাম ও ক্যালকার্ব ওষুধ গ্রহণের পর আমি রাতে ভালো ঘুম পেতাম এবং মানসিকভাবে অনেক শান্ত অনুভব করতাম।
-
সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টঋতু পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় ঠান্ডা-সর্দি লেগে থাকতো। প্রচলিত ওষুধ গ্রহণের পরও তা বারবার ফিরে আসত। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় পলিক্রেস্ট ওষুধ, বিশেষ করে নক্স ভমিকা ও আর্সেনিকাম অ্যালবাম ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান পাই।
হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক
অনেক বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান, কারণ এতে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর মাত্রা এতটাই কম যে, অনেক সময় তা প্লেসিবো ইফেক্ট হিসেবেও কাজ করতে পারে। তবে, বহু মানুষ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হয়েছেন এবং তারা এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে আস্থা রাখেন।
উপসংহার
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকে উপকার পেয়েছেন, আবার কারো ক্ষেত্রে এটি কাজ করেনি। এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ফলাফল দিতে পারে। তবে যারা দীর্ঘমেয়াদী, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এবং স্বাভাবিক প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতির সন্ধান করছেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। যদিও এটি গ্রহণের আগে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
0 মন্তব্যসমূহ